উধাও হয়ে যাচ্ছে নেপচুনের মত গ্ৰহ

উধাও হয়ে যাচ্ছে নেপচুনের মত গ্ৰহ

আমাদের সৌরজগতের বাইরে, পৃথিবী থেকে মাত্র ৯৬ আলোকবর্ষ দূরে আছে, নেপচুনের আকারের একটি গ্রহ। নাম তার GJ 3470b। যেটি লাল রঙা এক বামন নক্ষত্রকে বা ডোয়ার্ফ স্টারকে ঘিরে পাক খাচ্ছে। হাবল টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে, এই GJ 3470b গ্রহটি প্রায় অবিশ্বাস্যগতিতে বাস্পীভূত হয়ে যাচ্ছে। মানে গ্রহটি যে উপাদানগুলি নিয়ে গঠিত, সেই সব উপাদানগুলি বাস্প হয়ে মহাকাশে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

ফলে দ্রুত ছোট হয়ে যাচ্ছে গ্রহটি। সৌরজগতের বাইরে থাকা অনান্য গ্রহগুলি বা এক্সো-প্ল্যানেটদের চেয়ে ১০০ গুণ দ্রুত বাস্পীভূত হয়ে যাচ্ছে প্ল্যানেট-GJ 3470b। ধ্বংসের দিকে উল্কাগতিতে ছুটে চলেছে গ্রহটি। জ্যোতির্বিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞানীরা বিষয়টি নিয়ে তাঁদের গবেষণাপত্র প্রকাশ 

এই মহাবিশ্বে, একটি গ্রহের আয়ু নির্ভর করে দুটি বিষয়ের ওপর। বিষয় দুটি হল, গ্রহটি যে নক্ষত্রটিকে ঘিরে ঘুরছে,সেই নক্ষত্র থেকে গ্রহটির দূরত্ব এবং কক্ষপথে গ্রহটির গতিবেগ। এই দুটি বিষয় একত্রে ঠিক করে, গ্রহটি মহাবিশ্বে একটি দীর্ঘস্থায়ী বস্তু হয়ে থাকবে, না মহাবিশ্বের নিকষ কালো কবরখানায় হারিয়ে যাবে স্রেফ উবে গিয়ে।

সৌরজগতের বাইরে থাকা ‘সুপার আর্থ‘ ও ‘হট জুপিটার‘ নামের গ্রহগুলির কক্ষপথ, তাদের নিজস্ব সূর্যের খুব কাছে অবস্থিত। ফলে নিজস্ব সূর্যের অকল্পনীয় উত্তাপের ফলে গ্রহগুলির ওপরের স্তর বাস্পীভূত হয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন এই গ্রহগুলি তাদের আবহাওয়া ও ওপরের স্তর হারিয়ে ধীরে ধীরে ছোট গ্রহে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু আকারে ছোট হওয়ার প্রতিযোগিতায় বুঝি সবাইকে টেক্কা দিয়েছে GJ 3470b নামের গ্রহটি।

 

আমেরিকার হপকিন্স ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ডেভিড সিং বলেছেন, “GJ 3470b গ্রহটির বাস্পীভূত হওয়াটা, অনেকটা বন্দুকের নল থেকে বার হওয়া ধোঁয়ার মতো দেখতে লাগে। টেলিস্কোপ দিয়ে দেখলে দেখা যাবে, গ্রহটি থেকে অনবরত সাদা ধোঁয়া উঠে মহাশূন্যে মিলিয়ে যাচ্ছে। এই ভাবে গ্রহটি তার ভরের (Mass) বিশাল অংশ হারিয়ে ফেলছে”। প্রফেসর ডেভিড জানিয়েছেন, “আমরা লক্ষ করেছি GJ 3470b নামের গ্রহটি, সৌরজগতের বাইরে থাকা অনান্য গ্রহের চেয়ে অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে তার ভর হারাচ্ছে। আজ থেকে কয়েক লক্ষ বছরের মধ্যে গ্রহটি মহাশূন্যে মিলিয়ে যাবে যাবে ”।

 

হাবল টেলিস্কোপের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, ইতিমধ্যেই গ্রহটি হারিয়েছে তার ভরের ৩৫ শতাংশ। গ্রহটির আবহাওয়া ও বাইরের স্তর প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। সৌরজগতের বাইরে আবিষ্কৃত প্রথম এক্সো-প্ল্যানেট, GJ 436b -এর কিন্তু এতটা ক্ষতি হয়নি। এর কারণ কী! উত্তর হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, নবীন নক্ষত্রদের ঘিরে পাক খেয়ে চলা গ্রহগুলি বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কারণ নবীন নক্ষত্রগুলি অনেকবেশি সক্রিয় ও শক্তিশালী। বৃদ্ধ নক্ষত্রদের চেয়ে নবীন নক্ষত্রগুলি অনেক বেশি তাপের বিকিরণ ঘটায়।

হারিয়ে যেতে বসা GJ 3470b গ্রহটি যে নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরছে, সেই ‘লাল বামন’ নক্ষত্রটি বয়সে নবীন। তাই লাল বামনের প্রচন্ড উত্তাপে অবিশ্বাস্য গতিতে বাস্পীভূত হয়ে যাচ্ছে GJ 3470b। তাছাড়া GJ 3470b গ্রহটি কম ঘনত্বযুক্ত হওয়ায়, গ্রহটির মাধ্যাকর্ষণও কম। ফলে গ্রহটি তার বাস্প হয়ে যাওয়া অংশকে নিজের মধ্যে টেনে ধরে রাখতে পারছে না। মহাশূন্যে ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই অনিবার্যভাবেই লাল বামনের ক্রোধের হল্কা, নিজের দেহে নিতে নিতে, শেষ দিনটির জন্য অপেক্ষা করছে এক্সো-প্ল্যানেট-GJ 436b।

Send a Message

An email will be sent to the owner